শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩১ অপরাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক: শনিবারের রাতটি ছিল সউদী আরবের ইতিহাসের এক ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাত। সে রাতে ১১ জন সউদী শাহজাদা এবং কয়েক ডজন সাবেক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। সউদী আরবের ইতিহাসে এ ঘটনা নজিরবিহীন। শনিবার সে গ্রেফতারের খবর প্রচার করে সরকারী বার্তা সংস্থা এসপিএ ও রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত টিভি চ্যানেল আল আরাবিয়া।
গত ক’দিনে সে ঝড়ের বেগ থিতিয়ে এসেছে। শুরু হয়েছে নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ মূল্যায়ন। সর্বত্রই এখন আলোচনার বিষয় এই যে এ গ্রেফতার ঘটনার মূল উদ্দেশ্য কি? এ কি ভিন্নমত দমন করা? দেশে প্রভাবশালীদের দুর্নীতি বন্ধ করা? নাকি যুবরাজ মোহাম্মদের সিংহাসন আরোহণের পথের বাধা সরিয়ে দেয়া? প্রচন্ড ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কি চাইছেন? সউদী শাহী পরিবারের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিরোধ এবং সউদী পররাষ্ট্র নীতি ভবিষ্যতে কোনদিকে গতি নিতে চলেছে?
৩২ বছর বয়সী উচ্চাভিলাষী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিরোধীদের আটক করছেন, বিশেষ করে তাদের যারা তার নিজের রাজপরিবারে তার বিরোধী। শনিবার রাতে যুবরাজ ও তার পিতা বাদশাহ সালমানের নির্দেশে পুলিশ ১১ জন শাহজাদা, ৪ জন বর্তমান মন্ত্রী ও কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীসহ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সাধারণ ভাবে এটা এমবিএস নামে বাপক পরিচিত যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে পরিচালিত দুর্নীতি দমন অভিযানের অংশ। কিন্তু বহু বিশ্লেষকই বলছেন, আসল ঘটনা হচ্ছে সিংহাসনের উত্তরসুরি যুবরাজ তার নিজ ক্ষমতা সৃদৃঢ় করতে সম্ভাব্য বিরোধীদের কারাগারে পাঠাচ্ছেন।
ওবামা প্রশাসনে মধ্যপ্রাচ্য বিয়য়ক উপ-সহকারী মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জর্জটাউন বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক কলিন কাল বলেন, সউদী আরবে সরকারের যে কোনো ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা যেতে পারে। এটা মনে হচ্ছে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জকারীদের সরিয়ে এমবিএসের কর্তৃত্ব সংহত করার চূড়ান্ত পদক্ষেপ।
এ গ্রেফতার ঘটনা যুবরাজ হওয়ার পর এমবিএসের তার নিজের অবস্থান সংহত করার জন্য নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের অংশ। তিনি তার পিতা বাদশাহ সালমানের শাসনামলের সউদী নীতির স্থপতি।
ধারণা করা হচ্ছে যে সউদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার মৌলিক রূপান্তর ঘটিয়ে তাকে আরো কেন্দ্রায়িত ব্যবস্থায় আনাই এর লক্ষ্য যার ফলে ক্ষমতা আরো বেশিমাত্রায় বাদশাহর হাতে রক্ষিত থাকবে।
যুবরাজ মোহাম্মদের ক্ষমতা সুদৃঢ়করণ খারাপ কি ভালো, তা কোথায় দেখা হবে তার উপর র্ন্ভির করে। যখন তা অভ্যন্তরীণ নীতির বিষয় হয় তখন দেখা যায় যে যুবরাজের অভ্যুদয় সংস্কারের জন্য এক বড় শক্তি। তিনি সউদী নারীদের গাড়ি চালনার অনুমতি প্রদানসহ কিছু সফল পদক্ষেপ নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে লড়াই করার বিপুল আগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। তিনি তেলনির্ভর সউদী অর্থনীতির আধুনিকায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। কিন্তু পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তিনি অবিশ^াস্য রকম ধ্বংসাত্মক। তিনি ইয়েমেন যুদ্ধের যে যুদ্ধে ১৩ হাজার ৫শ’রও বেশি লোক নিহত হয়েছে এবং কাতারের সাথে খুব খারাপ এক ক‚টনৈতিক সংকটের মূল হোতা।
শনিবারের গ্রেফতার অভিযান নিছক সামান্য পারিবারিক বিরোধের কারণে নয়-এটা হচ্ছে সউদী আরবের নীতি ও রাজনৈতিক ভবিষ্যতের লড়াইয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা যার অবসান সুদূর পরাহত।
ডিউক বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আবদেসালাম মাগরাউই বলেন, সউদী রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অস্বাভাবিক গ্রেফতার এক বিরাট ব্যাপার। এটা নজিরবিহীন ও তড়িঘড়ি করে নেয়া এক ব্যবস্থা সউদী আরব ও এ অঞ্চলের উপর যার বিপুল প্রভাব পড়তে পারে। বিন সালমান বর্তমান যুবরাজ। মনে রাখতে হবে যে তার পিতার মৃত্যু বা অবসরের পর সিংহাসনে আসীন হওয়ার পথটি মসৃণ হবে না।
আকস্মিক এ গ্রেফতারের প্রকৃত কারণ বুঝতে চাইলে সউদী শাহী রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসের খানিকটা জানা দরকার। বাদশাহ আবদুল্লাহর মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে বাদশাহ সালমান ক্ষমতায় আসেন। একজন বিশ^নেতা হওয়ার পক্ষে ৭৯ বছর বয়স্ক সালমান ছিলেন বৃদ্ধ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কঠোর নীতি নির্দেশনা প্রদানের মাধ্যমে শাসন করতে পারবেন এমনটি আশা করা হয়নি। ব্যাপক গুঞ্জন ছিল যে, তিনি স্মৃতিভ্রংশতায় ভুগছেন। এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, তার সিংহাসনারোহণ রাজ পরিবারের বিস্তৃত প্রতিযোগী শাখাগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে প্রভাব বিস্তারের লড়াই। পিতার ক্ষমতাসীন হওয়ার সময় বিন সালমানের বয়স ছিল ২৯। তিনি দ্রুত বড় বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হন। ক্ষমতায় বসার কিছুদিন পরই তিনি পুত্রকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করেন।
এমবিএস তার প্রভাব বিস্তারে সময় ক্ষেপণ করেননি। নজিরবিহীন ভাবে ক্ষমতা সংহত করতে অগ্রসর হন তিনি। ২০১৫ সালে ইয়েমেনে হুতিদের দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত সরকারের পক্ষে সউদী নেতৃত্বাধীন সামরিক হস্তক্ষেপের চালকশক্তি তিনি। এ হস্তক্ষেপ ব্যাপক অর্থে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ সংঘাত অবসানের কোনো লক্ষণ নেই। কিন্তু এ ঘটনা পিতার শাসনাধীনে যুবরাজের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে সমস্যা হয়নি। এমবিএস দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়সহ পররাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সর্বোচ্চ প্রভাব বিস্তার করেছেন। দেখা যায়, তার পিতা আনুষ্ঠানিক রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্ব পালন করলেও তিনিই কার্যত সরকার প্রধানের কাজ করছেন।
এমবিএস দ্রæতই তার ক্ষমতা সংহত করার দিকে অগ্রসর হন। ২০১৬ সালের এপ্রিলে তিনি সউদী ধর্মীয় পুলিশের কাউকে গ্রেফতারের ক্ষমতা রহিত করেন। সউদী আরবের ক্ষমতাশালী ধর্মীয় গোষ্ঠির জন্য এ ছিল সুস্পষ্ট আঘাত। ২০১৭ সালের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে ও তাকে যুবরাজ করে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী করতে তার পিতাকে রাজি করান। কিন্তু ২০১৫ সালের এপ্রিলে বাদশাহ সালমান যখন শাহজাদা মোহাম্মদ বিন নায়েফকে যুবরাজ ঘোষণা করেন তা এ অঞ্চলে প্রশংসিত হয়। বলা হয়েছিল, ৫৪ বছর বয়সী শাহজাদাকে যুবরাজ করার মধ্য দিয়ে সউদী আরব তরুণ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সংস্কারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তারপর শাহজাদা মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগও একইভাবে ইতিবাচক বলে দেখা হয়। কিন্তু ২১ জুন শাহজাদা বিন নায়েফকে অপসারণ ও শাহজাদা বিন সালমানকে যুবরাজ নিয়োগ ছিল নজিরবিহীন ঘটনা।
এ সপ্তাহান্তের ঘটনা এক হিসেবে এমবিএসের ক্ষমতা দখলের একটি সম্প্রসারিত অংশ যা ২০১৫ সাল থেকে চলে আসছে। তবে আসলে এটা তার চেয়েও বেশি কিছু। এটি হচ্ছে সউদ পরিবারের মধ্যে তার প্রতিদ্ব›দ্বীদের উপর সরকারী হামলা।
মাগরাউই বলেন, শাহী পরিবার তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কিভাবে ব্যবস্থাপনা করেছে তা সবসময় গোপন রাখা হয়েছে। কিন্তু এ গ্রেফতার সব কিছুকে খোলামেলা করে দিয়েছে। সাধারণের কাছে এখন শাহী পরিবার এবং গোত্র, পরিবার ও ধর্মীয় রক্ষণশীল গোষ্ঠির মধ্যে সঙ্ঘাত ও ক্ষমতার দ্ব›দ্ব উন্মুক্ত হয়ে গেছে। সউদী ইতিহাসের পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ে এটা হচ্ছে সবচেয়ে অস্থির সময়।
কেন এমবিএস এত ক্ষমতাশালী লোককে গ্রেফতার করলেন? এর অর্থ সম্ভাব্য হুমকিদের সরিয়ে দেয়া হল। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে রয়েছেন শাহজাদা আলওয়ালিদ বিন তালাল। তিনি ১০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ তহবিল কিংডম হোল্ডিংস-এর মালিক এবং বিশে^র ধনী ব্যক্তিদের একজন। শাহজাদার অর্থসম্পদ তাকে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী করেছে। এমবিএস পরিষ্কার তাকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবে দেখেন।
এটা শুধুুমাত্র গ্রেফতার নয়। সউদী আরবের ন্যাশনাল গার্ডের প্রধানকে শনিবার বরখাস্ত করা হয় ও সাথে সাথে আরেকজনকে সে পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ন্যাশনাল গার্ড প্রায় মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের মত। এটা অনেকটাই সেনাবাহিনীর সমান্তরাল বাহিনী। সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থান থেকে রাজপরিবারকে রক্ষার জন্য এ বাহিনীর সৃষ্টি । এ দিনই নৌবাহিনীর প্রধানকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে ও সে পদে আরেকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের জায়গায় যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের এমবিএসের ক্ষমতার জন্য কম হুমকি মনে করা হচ্ছে।
প্রিন্সটন স্কলার বার্নার্ড হেইকেল ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনকে বলেন, এর ফল হয়েছে এই যে এমবিএস শক্তিশালী হয়েছেন ও তার পিতা সউদী আরবের এ যাবতকালের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী বাদশাহতে পরিণত হয়েছেন।
এমবিএসের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা সউদী আরব ও বিশে^র জন্য ভালো জিনিস কিনা তা এখনো পরিষ্কার নয়। যুবরাজ মোহাম্মদকে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সংস্কারক বলে অভিহিত করে। সাধারণ ভাবে মনে হয় যে তরুণ যুবরাজ দেশকে এক নতুন যুগের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। তার কথাবার্তা ও কাজ বলে যে তিনি তিনি সউদী আরবকে তেল নির্ভরতা থেকে সরিয়ে নিতে এবং ইসলামের উদার রূপটিকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। বলা হচ্ছে, এমবিএসের কর্মসূচি সউদী নারী সমাজ ও অর্থনীতির জন্য ভালো, কিন্তু এ অঞ্চলের জন্য বিপজ্জনক
তবে অভ্যন্তরীণ নীতির ক্ষেত্রে এমবিএস অগ্রসরমান চিন্তার অধিকারী হলেও মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি আগ্রাসী। তিনি এ অঞ্চলে ইরান ও তার প্রভাবকে প্রায় অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেন। তাই তিনি ইরানের বিপরীতে সউদী আরবের প্রভাব বিস্তার করার জন্য তার সকল ক্ষমতা ও উপকরণকে ব্যবহার করেছেন।
তার আগ্রাসী আচরণ হোয়াইট হাউসের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সউদী আরবের প্রতি মার্কিন নীতি পরিবর্তন করেছেন এবং সউদী আরবের ঘনিষ্ঠ হয়েছেন ও ইরানের বিরুদ্ধে আরো দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। ব্যক্তিগত পর্যায়েও সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে। অক্টোবরে এমবিএস ট্রাম্পের ঊর্ধ্বতন সহযোগী জেয়ার্ড কুশনারের সাথে এক বৈঠক করেন। এটি ছিল তােেদর দু’জনার মধ্যে অনুষ্ঠিত বহু বৈঠকের একটি।
সব কিছু মিলে মনে হয়, ক্ষমতার উপর এমবিএসের শক্ত নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। তবে তার ব্যাপক নীতি পরিবর্তন এবং নজিরবিহীন গণ গ্রেফতার সউদী শাহী পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। এমনকি তার বিরুদ্ধে এক ধরনের হালকা অভ্যুত্থানও হতে পারে।
মাগরাউই বলেন, যুবরাজ মোহাম্মদসহ নতুন প্রজন্মের শাহজাদাদের ক্ষমতায় আগমন ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে অনিশ্চয়তা ও চাপ সৃষ্টি করতে পারে। নতুন ও উন্মুক্ত প্রতিষ্ঠান ছাড়া এ ধরনের উদ্বেগ বিচক্ষণ নয় এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং যুদ্ধ না হলেও এক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার অধ্যায় সৃষ্টি করতে পারে।
কথা হচ্ছে, বিন সালমান এক বিরাট জুয়া খেলছেন। তার উচ্চাকাক্সক্ষী নীতি কর্মসূচি ইতোমধ্যেই বিতর্কিত হয়েছে। তিনি যে সময় তা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন একই সময়ে শাহী পরিবারের সদস্যদের গ্রেফতার করছেন যা নিশ্চিতভাবে এক প্রকার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেবে।
মিডল ইস্ট মনিটর বলেছে, সউদী আরবে সপ্তাহান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখনো বিভ্রান্তিকর। এটা বলা হয়ত যথেষ্ট যে সেগুলো কাকতালীয় ভাবে সংঘটিত হয়েছে, আবার কোথাও কোথাও ঘটনাগুলোর মধ্যে একপ্রকার সমন্বয়ও লক্ষ্য করা যায়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে কিছু লোককে কোনো অভিযোগে বা অন্য কারণে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু ইতিহাস আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের দমনের মধ্য দিয়ে শুরু কোনো সংস্কারই সফল হওয়ার ঘটনা এ পর্যন্ত বিরল। প্রশ্ন যে এটা কী করে সম্ভব যে, একটি দুর্নীতি দমন কমিটি গঠিত হওয়ার কয়েক ঘন্টা পরই এত বেশি সংখ্যক মানুষকে গ্রেফতার করতে পারে? এটা সউদী বিচার ব্যবস্থাকে উপহাস ও সংস্কার প্রক্রিয়ার বিশ^াসযোগ্যতা খর্ব করেছে। অন্যদিকে বিষয়টি রাজনৈতিক ‘উইচ হান্ট’-এ পরিণত হয়েছে। সপ্তাহান্তের ঘটনা এমন একটি অঞ্চলে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের অনভিজ্ঞতাকে প্রকাশ করেছে যেখানে একজন উন্নত মানের রাজনৈতিক নেতার ভীষণ প্রয়োজন।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটে সউদী আরব বিশেষজ্ঞ ব্রুস রিডেল আল মনিটর-এ লিখেছেন, সউদী আরব ক্রান্তিকালে উপনীত হয়েছে। তেলের নিম্নমূল্যের কারণে তার অর্থনীতি রুগ্নদশা শুরু হয়েছে। ইয়েমেনের যুদ্ধ তাকে জলাভ‚মিতে আটকে দিয়েছে, কাতার অবরোধ ব্যর্থ হয়েছে, লেবানন, সিরিয়া ও ইরাকে ইরানের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে এবং উত্তরসূরি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সউদী ইতিহাসের অর্ধশতকেরও বেশি সময়ে এটাই সর্বাপেক্ষা অস্থিরতার কাল। সূত্র: ভক্স মিডিয়া